এড আব্বাস উদ্দিন : বাংলাদেশে পথশিশুদের বড় অংশই রয়েছে রাজধানী ঢাকায়৷ ফেলে দেয়া খাবারেই তাদের ক্ষুধা মেটে৷ আর ফেলে দেয়া জিনিসপত্র সংগ্রহ ও বিক্রি করাই তাদের প্রধান পেশা৷ তারা থাকে ফুটপাথ, পার্ক অথবা কোনো খোলা জায়গায়৷ চিত্র শিল্পী রফিকুন্নবী ( রনবী)-র ‘টোকাই’ চরিত্র সবার জানা৷ অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক বিচিত্রায় তাদের একেকটা ক্যারেক্টার তিনি প্রতি সপ্তাহে হাজির করতেন৷ তারা অনেক বুদ্ধিদীপ্ত ছোট ছোট মন্তব্য করত৷ এটা অনেক আগের কথা৷ তারাই পথ শিশু৷ তাদের কেউ ভেঙে যাওয়া পরিবার থেকে বের হয়ে আসে৷ কেউ অভাবের তাড়নায়৷ আবার কেউবা নদী ভাঙনের শিকার হয়ে৷ এরা শিশু৷ এদের বয়স ৬ থেকে ১৮ বছরের নীচে৷ এই বয়সের এসব শিশুর দেখা মেলে ঢাকার রাস্তা, পার্ক, বাস স্টেশন, রেল স্টেশন বা খোলা কোনো জায়গায়৷ তাদের কোনো ঘরবাড়ি নেই৷ নেই কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা৷ পথেই থাকে৷ পথেই তাদের জীবিকা৷ তাদের বয়সও তো বাড়ে৷ তারপর কোথায় যায়? কী হয় তাদের পরিণতি? তাদের জীবন কেমন হয়?
এই পথ শিশুদের নিয়ে কাজ করছে লোকাল এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (লিডো) নামের একটি এনজিও৷ সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এদের মধ্যে যারা কিছু কিছু সংস্থার অধীনে থাকে, তারা হয়তো মূল ধারায় গিয়ে যুক্ত হয়৷ কিন্তু এর বাইরে যারা থাকে, তাদের কেউ কেউ মাদকাসক্ত হয়ে রাস্তায়ই মারা যায়৷ কেউ কেউ চক্রের মাধ্যমে পাচার হয়ে যায়৷ যারা পাচারের শিকার হয়, তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি হয়৷ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয় তারা৷ যারা মেয়ে, তারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়৷ কোনো কোনো গ্যাং তাদের যৌনকর্মী হতে বাধ্য করে৷”
এরা অপরাধী নয়, অপরাধের শিকার:
‘‘অপরাধীচক্রগুলো এদের মাদকসহ নানা অবৈধ ব্যবসায় কাজে লাগায়৷ এরা অপরাধী নয়৷ এরা অপরাধের শিকার হয়৷ রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের নানা কাজে ব্যবহার করে৷”বাংলাদেশে পথ শিশুর সংখ্যা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো জরিপ নেই৷ কেউ বলেন ২০ লাখ৷ আবার কেউ বলেন ২৫ লাখ৷ ঢাকা শহরে আছে কমপক্ষে ৬-৭ লাখ৷ তবে এদের মধ্যে ৫০ হাজার শিশু আক্ষরিক অর্থেই রাস্তায় থাকে৷সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক এনহান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (সিপ) নামের একটি সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পথশিশুদের প্রায় ৪৪ শতাংশ মাদকাসক্ত, ৪১ শতাংশ শিশুর ঘুমানোর কোনো বিছানা নেই, ৪০ শতাংশ শিশু গোসল করতে পারে না, ৩৫ শতাংশ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে, ৫৪ শতাংশ অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই এবং ৭৫ শতাংশ শিশু অসুস্থ হলে ডাক্তারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারে না৷একই গবেষণায় বলা হয়, ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে সর্বোচ্চ ছয় মাস থাকে৷ এদের মধ্যে ২৯ শতাংশ শিশু স্থান পরিবর্তন করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কারণে আর ৩৩ শতাংশ পাহারাদারের কারণে৷খোলা আকাশের নীচে ঘুমানোর পরও তাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ শিশুকে মাসিক ১৫০ থেকে ২০০ টাকা নৈশপ্রহরী ও মাস্তানদের দিতে হয়৷ তারা পুলিশি নির্যাতন এবং গ্রেপ্তারেরও শিকার হয়৷জানা যায়, পথশিশুদের বড় একটি অংশ আসে দরিদ্র ‘ব্রোকেন ফ্যামিলি’ থেকে৷ দারিদ্র্যই মূল কারণ৷ বাবা-মায়ের বহু বিবাহও একটি কারণ৷ তার সাথে যুক্ত হয় নদী ভাঙন, ভূমিহীনতা, জলবায়ুর পরিবর্তন৷
এড আব্বাস উদ্দিন , আইনজীবী, বাংলাদেশ
সুপ্রিম কোট