কুমিল্লা প্রতিনিধি : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ৯নং কনকাপৈত ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পের ২০-৩০ শতাংশ কাজ করে বাকি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চেয়ারম্যান ভুয়া ভাউচার ও প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে লাখ লাখ টাকা লুট করেছেন। এছাড়া একই রাস্তা বিভিন্ন নামে সংস্কার দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টাকা তছরুপও করেছেন। এ নিয়ে সুশীল সমাজ, রাজনীতিবীদ ও সাধারণ জনগণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল ২০১৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর নিজের ইচ্ছেমতো অফিস পরিচালনা করছেন। পাঁচ বছরের এলজিএসপি প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছেন। কাজ শতভাগ দেখানো হলেও বাস্তবায়ন হয়েছে ২০-৩০ শতাংশ। ফলে জনগণের দুর্ভোগ কাটেনি। এতে করে সরকারের গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্প কাগজে কলমে বাস্তবায়ন দেখানো হলেও সুফল পায়নি সাধারণ মানুষ। ২০১৭-১৮, ১৮-১৯, ১৯-২০, ২০-২১ অর্থ বছরে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে টিআর, কাবিখা, এডিপি ও নন ওয়েজ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন দেখিয়ে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। এছাড়াও ৪০ দিনের কর্মসূচিতে শ্রমিক দিয়ে মাটি না কেটে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে পুরো এক তৃতীয়াংশ টাকা আত্মসাত করেছেন। বিষয়টি এলাকায় প্রচার হলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে সুশীল সমাজ, রাজনীতিবীদ ও সাধারণ জনগণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আনুমানিক ৩০ শতাংশ কাজ করে চেয়ারম্যান কর্তৃক আত্মসাতকৃত কয়েকটি প্রকল্প হলো; ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে কাবিটা সাধারণ ১ম পর্যায় উন্নয়ন প্রকল্পে লাউলাইশ সাজুর দোকান হইতে মলিয়ারা ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা পূণ নির্মাণ কাজে মাটি ভরাট না করেই ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা আত্মসাত করেন। বুদ্দিন খুরশিদের বাড়ি হতে জাকির মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পূণঃ নির্মাণ কাজ না করেই ৪০ হাজার টাকা আত্মসাত করেন। বুদ্দিন মহিলা মাদরাসা রাস্তা, শাহিনের বাড়ি হতে ভুট্টুর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পূণঃনির্মাণ ও বুদ্দিন মহিলা মাদরাসার মাঠ ভরাট ২৫-৩০ হাজার টাকার মাটি ভরাট করে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। ১৮-১৯ অর্থ বছরে পন্নারা মুন্সিবাড়ি হইতে মিয়াজী বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পূণঃ নির্মাণ ২০ হাজার টাকার মাটি ভরাট করে ২ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। শাহাজানপুর আবু তাহের মোল্লার বাড়ি হইতে হাজী কাদেরের বাড়ি, বুদ্দিন শাহিনের বাড়ি হতে পেয়ার আহম্মদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা ও জাগজুর বেধি বাধা পূণঃ নির্মাণ কাজে আনুমানিক ৬০ হাজার টাকার মাটি ভরাট করে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাত করেন। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি ১ম পর্যায়ে কনকাপৈত ফরিদের বাড়ি রাস্তা পূণঃ নির্মাণ আনুমানিক ২০ হাজার টাকা মাটি ভরাট করে ২ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। কালকোট বীরাঙ্গনা আফিয়া খাতুনের বাড়ির রাস্তা পূণঃনির্মাণ ও বসতভিটা ভরাটে অর্ধলাখ টাকার মাটি ভরাট করে ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। ২০-২১ অর্থ বছরে জংগলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০ ট্রাক মাটি ভরাট করে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। পাঠানপাড়া আবদুস সাত্তার সাহেবের মসজিদের সামনের রাস্তা পূণঃনির্মাণ, জাগজুর হতে পন্নারা বেড়িবাধ পুণঃনির্মাণ(১ম অংশ ও দ্বিতীয় অংশ), বুদ্দিন পশ্চিম পাড়া সেলিমের বাড়ি সংলগ্ন রাস্তা পুণঃনির্মাণ, আতাকরা ইউসুফের বাড়ি সংলগ্ন রাস্তা পুণঃনির্মাণ ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা উত্তোলন করে। পন্নারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপনে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে ৭০ হাজার টাকা আত্মসাত, হিংগুলো চাঁনখার দীঘির পূর্ব-উত্তর কর্ণারে ২০ হাজার টাকা মাটি ভরাট করে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাত করে। এরমধ্যে বুদ্দিন গ্রামের একটি রাস্তাকে বেশ কয়েকবার উন্নয়ন করেছে বলে দেখিয়ে টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। এছাড়াও শপথের ৬ মাসের মধ্যে ধোড়করা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক আবদুল মন্নানকে ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে মারধর করে। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি জনতার চেয়ারম্যান। আমি দুর্নীতি করে খাই না। এলাকায় গিয়ে আগে আমার সম্পর্কে খোঁজ নেন। এলাকার কিছু কুচক্রী মহল আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। আমি কোন ধরনের অনিয়মের সাথে জড়িত নেই’। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জোবায়ের হোসেন বলেন, ‘আমার জানামতে তিনি শতভাগ কাজ করেছেন। যদি দুর্নীতি করে থাকে, তাহলে আপনারা তদন্ত করে খতিয়ে দেখুন’।