মোঃ মুকিম উদ্দিন : সুনামগঞ্জের ৫ টি সরকারি হাইস্কুলেই শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। স্বাভাবিক নিয়মে পাঠদান শুরু হলে এই বিদ্যালয়গুলোতে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরাই। জাতীয়ভাবে দীর্ঘদিন পর শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে। এই সময়েই সুনামগঞ্জের অবহেলিত এলাকার এই বিদ্যালয়গুলোর শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ দেবার দাবি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানদের। জেলায় পুরোনো সরকারি হাইস্কুল রয়েছে ৫ টি। এগুলো হচ্ছে সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, জগন্নাথপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও জগন্নাথপুর স্বরূপ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়। জেলায় নতুন সরকারি হওয়া উচ্চ বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে ছাতক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও জামালগঞ্জ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়।তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রসংখ্যা ৭৪৩ জন। শিক্ষকের পদ আছে ১১ জনের। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন ৫ জন। প্রধান শিক্ষক, সহকারি প্রধান শিক্ষকসহ ৬ পদ শূন্য। এরমধ্যে ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম ডেপুটেশনে আছেন সিলেটের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসায়। অন্য ৪ শিক্ষকের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অফিসিয়েল কাজে ব্যস্ত থাকলে বিদ্যালয়ে শিক্ষক থাকেন ৩ জন। অসুস্থতাজনিত বা অন্য কোন কারণে কেউ ছুটিতে থাকলে, এই সংংখ্যা আরও নিচে নেমে যায়।ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন বললেন, কয়েক বছর ধরে বিদ্যালয়ে শিক্ষকের এমন সংকট চলছে। করোনাকাল থাকায় গেল দেড় বছর কম বুঝা গেছে এই সমস্যাটি। এই অবস্থা থাকলে, স্বাভাবিক পাঠদান শুরু হলে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হবে বিদ্যালয়ে। ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির পাঠদান একসঙ্গে শুরু হলে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো এবং ধর্মশিক্ষা আলাদা আলাদা পড়ানোর সময় অনেক ক্লাসেই শিক্ষক দেওয়া যাবে না। দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ না হলে স্বাভাবিক অবস্থায় সরকারি এই বিদ্যালয়ে নাজুক অবস্থা হবে।জগন্নাথপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫০ জন। এই বিদ্যালয়ে মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত করতে হলে ২২ বা ২৪ জন শিক্ষক পদায়ন জরুরি। ১৯৮৬ ইংরেজিতে ৯ জন শিক্ষকের পদ নিয়ে সরকারি হওয়া এই বিদ্যালয়ে এখনো পদ বাড়েনি। নয় জনের পদ থাকলেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক আছেন ৩ জন। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের কাজে অন্যত্র গেলে শিক্ষক থাকেন ২ জন। গেল ৭-৮ বছর হয় বিদ্যালয়ে এই অবস্থা বিরাজমান। স্বাভাবিক সময়ে পাঠদানে হযবরল অবস্থা তৈরি হয়।ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত কুমার রায় বললেন, জাতীয়ভাবে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, পদ বাড়ানোর জন্যও আবেদন করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক পদায়ন না করলে, সুষ্ঠু পরিবেশ ধরে রাখা কঠিন।জগন্নাথপুর স্বরূপ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫০ জন। শিক্ষকের পদ আছে ১১ টি।ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাহেদ আলী বললেন, ৬-৭ বছর হয় ৩-৪ জনের বেশি শিক্ষক কখনোই ছিলেন না। এখন আমিসহ ৩ জন। আমি সরকারি কাজে ¯ু‹ল ছাড়লে শিক্ষক থাকবেন ২ জন। বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পাঠদান শুরু হবার আগে শিক্ষক দেওয়া জরুরি। না হয় সুশৃঙ্খল পরিবেশ রাখা কঠিন।
ঐতিহ্যবাহী সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ বহুদিন ধরেই শূন্য।বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফয়জুর রহমান বললেন, করোনাকালের ক্ষতি পুষিয়ে নেবার জন্য সামনের দিনগুলোতে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া জরুরি। কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব। ৩য় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত দুই শিফটে ক্লাস হয় ২৬ টি। কোন কোন সময় ক্লাস আরও বাড়ে। ৫২ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও আছেন ৩০ জন। অফিসিয়েল কাজ বা সরকারি কাজে আমার অনুপস্থিতি, ছুটি- অসুস্থতা মিলিয়ে অনেক সময় ২৬ জন শিক্ষকই থাকেন না। এই অবস্থায় রুটিন পাঠদান করাই মুশকিল, অতিরিক্ত ক্লাস কিভাবে হবে। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে, এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক না দিলে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ধরে রাখা কঠিন হবে।সরকারি এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দুই শিফটে ছাত্রসংখ্যা ১২০০ জন। এই বিদ্যালয়েও ৫২ জনের মধ্যে শিক্ষক আছেন ৩০ জন। স্বাভাবিক অবস্থায় শিক্ষক সংকটের কারণে পাঠদান ব্যাহত হবে বলে মন্তব্য করলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজ মো. মাসহুদ চৌধুরী।মাধ্যমিক-উচ্চ শিক্ষার সিলেট বিভাগের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর কবির আহমদ বললেন, সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের গ্রেড উন্নীত হওয়ায়, নিয়োগ দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল, পিএসসি থেকে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার সব কিছুই শেষ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সিলেট বিভাগের সকল শূন্য পদের তালিকাও আমরা দিয়েছি। বিভাগে ৩০ ভাগ শিক্ষকের পদ শূন্য। শিক্ষক নিয়োগ দ্রুতই হবে, সংকটও দূর হবে আশা করছি।