ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের চার নদীর সীমানা পিলার ও ওয়াকওয়ে নির্মাণকাজের গতি হতাশাজনক। জানা যায়, ‘বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (২য় পর্যায়)’ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল আগামী বছরের জুন মাসে। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৪০ শতাংশ।প্রকল্পের কাজে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় স্বয়ং নৌপ্রতিমন্ত্রী ও নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিব অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৭৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এ অর্থ ব্যয়ের পর বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর তীরে প্রকল্পের কাজ কিছুটা দৃশ্যমান হলেও বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে বাস্তব কাজের তেমন অগ্রগতি নেই। পিলার স্থাপনের যেটুকু কাজ হয়েছে তাতেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। পাইলিং না করে পিলার বসানোর ফলে এর বেশ কয়েকটি ইতোমধ্যেই উলটে পড়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্প ব্যয় ৩৩৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।কাজের ধীরগতি সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক ও সংশ্লিষ্টরা নানা অজুহাত তুলে ধরছেন, যার অন্যতম হলো করোনাভাইরাস পরিস্থিতি। কিন্তু এ অজুহাত কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। কারণ আমরা দেখেছি, করোনা পরিস্থিতির মাঝেও চলমান কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ থেমে থাকেনি।বস্তুত, দেশে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি যেন একটি নিয়মে পরিণত হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ না হওয়ার পেছনে সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতার পাশাপাশি নানা দুরভিসন্ধিও কাজ করে। যেমন, প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। তাই কোনো প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হলে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত বলে মনে করি আমরা।নদী দখল রোধে এবং নদীর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রাখতে সীমানা পিলার নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা জানি, ঢাকা ও এর আশপাশের নদ-নদীগুলোর তীর ক্রমেই দখল হয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এ অশুভ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। দেশের সব নদী, বিল ও খালগুলোর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের পাশাপাশি আবারও যাতে দখল প্রক্রিয়া শুরু না হয় সে জন্য নদীর সীমানা পিলার নির্মাণ করা প্রয়োজন এবং এ কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়া জরুরি। কারণ অনেক সময় দেখা যায় নদীর সীমানা সঠিকভাবে চিহ্নিত না করেই পিলার বসানো হয়। অনেক সময় পিলার বসানো হয় নদীর বেশকিছুটা ভেতরে। বস্তুত এর মাধ্যমে দখলদারদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, পিলার নির্মাণকারী ও দখলদারদের মধ্যে যোগসাজশের মাধ্যমেই এ অপকর্মটি করা হয়ে থাকে। কাজেই নদীর সীমানা পিলার নির্মাণই যথেষ্ট নয়, পিলারটি সঠিক স্থানে ও টেকসইভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে কিনা, সেটিও দেখা জরুরি। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কারও কাজে কোনো গাফিলতি দেখা গেলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।